আজ ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ - বিশ্ববরেণ্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মদিন বা ১৬৩তম জন্ম বার্ষিকী। "ত্রিশরণ কৃপা" নামক একটি অনলাইন অনুষ্ঠান রবি ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে কয়েকজনকে নিয়ে একটি গীতি-কাব্য আলেখ্য'র মত লেখা হয়েছিল - খুব সম্ভবত ২০২১ সালে। আজকের দিনে সেটিকে অনলাইনে প্রকাশ করতে পেরে ভালই লাগছে। এই বছরেও আজকে ত্রিশরণ কৃপা'র অনুষ্ঠানে একইরকম পরিবেশন হল। মূল লেখা থেকে একটি গান (আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু) ও একটি কবিতার (জীবন মরণ) বদলে অন্য একটি গান (সংশয়তিমিরমাঝে না হেরি গতি হে) এবং অন্য একটি কবিতা (পরিচয়) পরিবেশিত হল। মূল লেখার সঙ্গে এইদুটিও যুক্ত করে দেওয়া হল। "শেষ সপ্তক" থেকে অংশটাও এইবারের পরিবেশনায় যুক্ত হয়েছে। পাঠকবর্গ বা শিল্পীবর্গ নিজেদের মত করে অংশবিশেষ নিয়ে তাদের নিজেদের মত করে অনুষ্ঠান করে, খুব ভাল লাগবে।
--------------------------------------------------------------------------------------
মন জাগ’ মঙ্গললোকে
----- শুভেন্দু মাইতি এবং
দীপক শীল, শুভশ্রী ভেঙ্কটরমন, মীরা চ্যাটার্জ্জী, ছন্দা
চক্রবর্তী
“জীবনের আশি বছর অব্দি চাষ করেছি
অনেক । সব ফসলই যে মরাইতে জমা হয় তা বলতে পারিনে --- কিছু ইঁদুরে খাবে, তবুও বাকি
থাকবে কিছু । জোর ক’রে বলা যায় না । যুগ বদলায়, কাল বদলায়, তার সাথে সব কিছুই তো
বদলায়, কিন্তু সবচেয়ে স্থায়ী আমার গান – এটা জোর ক’রে বলতে পারি । বিশেষ করে
বাঙালীরা শোকে-দুঃখে, সুখে-আনন্দে, আমার গান না গেয়ে তাদের উপায় নেই । যুগে যুগে এ
গান তাদের গাইতেই হবে ।” - জীবন স্মৃতি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
------------------------------------------------------------------------------------------
“মন জাগ’ মঙ্গললোকে ---
বিশ্বের সাথে জাগ’ অভয়
অশোকে”
১৯১৫ (৫৪), পূজা (জাগরণ),
রামকেলী,
ত্রিতাল
১) ত্রিশরণ কৃপায় (অনলাইন) রোজ সন্ধ্যায়, ঠাকুর, মা,
স্বামীজী ও তাঁদের গৃহী এবং সন্ন্যাসী ভক্তবৃন্দের স্মরণ-মনন করে আমাদের সময় কাটে
। আমাদের সুবিধা-অসুবিধা’কে সঙ্গে করেও আমরা প্রত্যেকে প্রত্যহ এই অনুষ্ঠানে
উপস্থিত থেকে, দিব্য ত্রয়ীর চরণে নিজেদেরকে আত্মসমর্পণ করার চেষ্টার কোনো ত্রুটি
রাখি না । রোজই শুনি, কিন্তু তবু যেন মন ভরে না । পরমাত্মার সেই চিন্তনে ডুব দিতে
মন আকুল, কিন্তু পরমানন্দ অধরা – তাই কবির ভাষায় আমাদের আকুল প্রার্থণা ---
নিত্য তোমার যে ফুল ফোটে
ফুল বনে
১৯১৩ (৫২), শান্তিনিকেতন,
পূজা
(বিশ্ব), ইমন-বাউল, একতাল
২) ১৯১৪ সালে শান্তিনিকেতনে থাকাকালীন রচিত "দাঁড়িয়ে
আছো তুমি আমার গানের ওপারে" গানটি । কবির অনেক গানই ঠিক করে পর্যায় ভাগ করা
যায় না - যেমন এই গানটি । গানটিতে কবিমানসীর
প্রতি আকুল নিবেদন ফুটে উঠেছে এবং এর সুরের মাধ্যমে যেন কবির আত্মনিবেদনের সুরটি
ধ্বনিত হয়েছে। চিরকাল কবির জীবন তরী বয়ে চলেছে তাঁর মানস প্রতিমার সান্নিধ্যে, কিন্তু অধরাই থেকে গেছে সেই অনুভব। তাইতো কবি বলছেন ,"আমার সুরগুলি পায় চরণ ,আমি পাই না তোমারে।" আবার একই সঙ্গে, পূজার ভঙ্গীটিও এখানে
যেন মূর্ত হচ্ছে । ঈশ্বরকে পাওয়ার যে আকাঙ্ক্ষা তা চরিতার্থ না হওয়ার বেদনায় কবি
বারবার আকুল প্রার্থনা জানাচ্ছেন, "এসো এসো,
পার
হয়ে মোর জীবন মাঝারে "। কিভাবে পার হবে? কবি’র আকূতি – “কবে নিয়ে আমার বাঁশি
বাজাবে গো আপনি আসি” অর্থাৎ তুমি আপনি এসে আমার এই প্রাণ-রূপ বাঁশিটিরে বাজিয়ে পার
কর – অর্থাৎ আমার হৃদিপদ্মে বিরাজ কর ।
গানটি ইমন রাগের ওপর ভিত্তি করে সুরারোপ করা হয়েছে।
দাঁড়িয়ে আছো তুমি আমার
গানের ওপারে
১৯১৪ (৫২),
শান্তিনিকেতন, পূজা (গান),
ইমন,
ত্রিতাল
৩) তিনি যেন পরশপাথর । জীবন-লাভের যে উদ্দেশ্য সর্বময় ঈশ্বর
ঠিক করে রেখেছেন, তার ঠিকানা লেখা রয়েছে যেন ওই পরশপাথরে । তাঁর ওই পরশপাথরের
ছোঁয়াটা পেলেই যেন সিঁড়ির সপ্তম ধাপে আমরা পৌঁছে যাব । আর সপ্তম ধাপে পৌঁছে গেলেই
ছাদের দরজায় পৌঁছে যাওয়া – তাই খ্যাপা সারাদিন ধরে খোঁজ করে পরশপাথরের । যে
পরশপাথরের ছোঁয়া একবার পেলে – (মন) বার বার (সেই পরশ) পেতে চায় ...
পরশপাথর
১৮৮১ (২০), শান্তিনিকেতন,
জ্যৈষ্ঠ
৪) “সংসার যবে মন কেড়ে লয়,
জাগে
না যখন প্রাণ,
তখনো, হে নাথ, প্রণমি তোমায়
গাহি
বসে তব গান ।।
অন্তর্যামী, ক্ষমো সে আমার শূন্য
মনের বৃথা উপহার ---
পুষ্পবিহীন পূজা-আয়োজন ভক্তিবিহীন
তান ।। ”
ঈশ্বর বিরহে রবীন্দ্রনাথের কাতর
চিত্ত যখনই আলোড়িত হয়েছে, তখনই তাঁর হৃদয় এক অনন্য প্রার্থণায়
ডুব দিয়েছে যা লিপিবদ্ধ হয়ে রয়েছে তাঁর বিভিন্ন সংগীতে । হৃদয় দেবতার উদ্দেশ্যে এমনই
এক রচনায় তিনি তাঁর ব্যাকুলতা প্রকাশ করে বলেছেন, ---
হৃদয়নন্দন বনে
১৮৯৪ (৩২),
পূজা
(বিরহ), মিশ্র-পঞ্চম/সৌহিনী ললিতা, ঝাঁপতাল
৫) ভক্ত আর ভগবান একে অপরেরর কাছে বাঁধা!! ভক্ত যেমন তার
ভক্তি দিয়ে ভগবানকে বেঁধে রেখেছে,
কৃপাময়
ভগবানও তেমনি ভক্তহৃদয়ে থাকতেই বেশি আনন্দ পান। তবে কি তিনি সব হৃদয়ে নেই? না না,
তা কেন হবে – তিনি সবার মধ্যেই আছেন। তবে তাঁর প্রকাশ একজনের মধ্যে বেশি, আর একজনের
মধ্যে কম কেন? তাঁকে খুঁজছে কয়জনে? যে যেমন তাঁর খোঁজ করে, সে তেমন তাঁর হদিস পায়
। আমি যে কাপড়টি পরে বের হব ভাবছি, সে কাপড়টি বিশ’খানা কাপড়ের তলায় যদি ঢাকা পড়ে
থাকে, তবে তো তার হদিস পেতে সময় লাগবে! তাই নয় কি? মন যদি মলিন হয় – তবে তো তাঁর
হদিস পেতে সময় লাগবে! মলিনতা দূর হলেই, যে ঈশ্বর অন্তরের গভীরে নিত্য জেগে রয়েছেন,
তিনি ভক্তপ্রাণের প্রেমে নিজেকে পরিপূর্ণরূপে প্রকাশ ঘটাবেন – তখনই “তোমার আনন্দ” “আমার
পর”!!
তাই তোমার আনন্দ আমার পর
১৯১০ (৪৯), জানিপুর,
পূজা
(নিঃসংশয়), দেশ, দাদরা
৬) “আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার,
পরানসখা বন্ধু হে আমার ।’
--- প্রেমিক কবি
তার অন্তরতম পরানসখা বন্ধুর প্রতীক্ষায় । চৈতন্য বা মুক্তিস্বরূপ যে অস্তিত্ব,
তাকে পরিপূর্ণ, অবাধ ও অনাবৃতভাবে পাওয়াতেই তো মিলন --- আর এই মিলনের জন্য
ব্যাকুলতাই তো অভিসার । এই অভিসার তো তীব্র আত্মানুসন্ধান । এই আত্ম-অনুসন্ধিৎসু
প্রেমিক কবি যখন “তোমার গান” গেয়ে “তোমাকেই” খুঁজতে অনাদি কাল হতে বেরিয়ে পড়েন,
তখন তার এই অন্বেষণ তো কোনো বাইরের অনুসন্ধান নয় । মানব-প্রকৃতির মধ্যেই, মানুষের
স্বরূপের মধ্যেই রয়েছে ওই অন্বেষণ --- চির না-পাওয়ার মধ্যেই রয়েছে তার চির-আকাঙ্ক্ষা । তাই এই আকূতির
কোনো আদি নেই, নেই কোনো অন্ত -
কবে আমি বাহির হলেম
১৯১০ (৪৯), তিনধরিয়া,
পূজা
(বন্ধু), ইমনকল্যান, তেওরা
৭) ১৮৮৭ সালে রচিত এই গানটিতে কবির নিবেদনের সুরটিই প্রাণীত
হয়ে ওঠে। ঈশ্বরের প্রতি তাঁর যে ভক্তি,তার নেপথ্যে যে উপনিষদের
প্রভাব, সেটির অনুরণন যেন ধ্বনিত হয়। কবি
জীবন দেবতার কাছে কৃতজ্ঞ । কবি প্রাকৃতিক শোভায় মুগ্ধ, কবি আত্ম পরিজন নিয়েও তৃপ্ত। তবুও, আশা যেন মেটে না। আসলে, কবির তো পরমাত্মার
সঙ্গে মিলিত হবার আকাঙ্ক্ষা । তাই ঈশ্বরের পদপ্রান্তে তিনি তাঁর সঙ্গে মিলিত হবার
প্রার্থনাই করছেন। অসীমের সঙ্গে মিলিত হবার কথাই তো রবীন্দ্র দর্শন। কিন্তু তা সীমার
মধ্যে থেকেই – তাকে লঙ্ঘন করে নয়। তাই সবার কথা বলেই তিনি ঈশ্বরের কথা বলছেন। তবু
অসীম যার স্বরূপ, সে অসীমের পূজারীই তো হবে অসীমেই যে তার পরম প্রাপ্তি – “তোমারে
না পেলে (সখা), আমি ফিরিব না, ফিরিব না ।”
অনেক দিয়েছো নাথ
১৮৮৭ (২৬), পূজা (বিবিধ),
আশাবরী-ভৈরবী,
ত্রিতাল
৮) রবীন্দ্রনাথ দুঃখকে দেবত্ব দান করেছেন। তিনি বলেছেন, 'দুঃখের দেবতা তোমাকে স্মরণ করে যা দিয়েছেন তা শান্ত চিত্তে
গ্রহণ করো, পৃথিবীতে এসে যে ব্যক্তি
দঃখ পেল না, সে লোক ঈশ্বরের কাছ থেকে
সব পাওয়া পেল না। 'রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনে
কম দুঃখ প্রত্যক্ষ করেননি। বারে বারে মৃত্যু, দুঃখ,
অপমান
রবীন্দ্রনাথকে শানিত করেছে সৃষ্টিপথে,
নির্মোহ
করেছে জগৎসংসারে, নস্টালজিক করেছে
ক্ষণেক্ষণে। তাই তিনি বলতে পেরেছেন 'আছে দুঃখ আছে মৃত্যু
বিরহদহন লাগে। তবুও শান্তি,
তবু
আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।'
আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু
১৯০৩ (৪২), বাল্মীকি প্রতিভা,
পূজা
(আশ্বাস), মিশ্র-যোগিয়া-ললিত, একতাল
৯) যার জন্ম হয়েছে –
তার মরণও আছে । কিন্তু মরণ-পরবর্তী জীবন কিভাবে প্রবাহিত হবে, তার নির্ণয় হয় এই
জীবনে । জীবনই যখন থাকছে না তখন মরণ-পরবর্তী জীবন আবার কি? মণীষী কবির সজাগ
দৃষ্টিতে সৃষ্টি’র অনন্ত তথা অমরত্ব অনেকটাই ধরা পড়ে যায় । সেই অনন্ত প্রকাশ পায় কবির
লেখা কবিতা, গানে এবং তারই প্রতিচ্ছবি স্থান পেয়ে যায় পাঠক-পাঠিকার অন্তরে – বারে
বারে – যুগে যুগে । প্রকৃতিপ্রেমিক কবির সৃষ্টি স্থান পেয়ে যায় অনন্ত এই সৃষ্টির
মাঝে, স্বাদ লাভ করে অমরত্বের --- কবির সৃষ্টির সাথে সাথে কবিও অমরত্ব লাভ করেন ।
জীবন-মরণ
“আলোচনা” পত্রিকা, কার্তিক ১৮৮৪
(১২৯১)
১০) বর্তমান জীবনে বা মরণ-পরবর্তী জীবনেও যে এই জীবন
আনন্দের মধ্যেই বিরাজ করবে তার নির্ণয় হয় এই জীবনের সাধনা’র ওপর – সাধনার মানের
ওপর । কিন্তু সাধন পথের কঠিন অনুশাসনে ভক্ত কখনও সখনও পথ হারিয়ে ফেলেন । তাই পরম
প্রেমময় ঈশ্বরের প্রতি তার কাতর মিনতি – তিনি যেন তাঁর প্রেমের অটুট বাঁধন দিয়ে
জীবনের সমস্ত গোলোকধাঁদা থেকে তাঁর এই ভক্তকে চিরতরে উতরে দিয়ে তাঁর চরণকমলে স্থান
দেন ।
জানি নাইতো সাধন তোমার বলে কারে
১৫ মার্চ ১৯১৪ (৫২), শান্তিনিকেতন, পূজা (নিঃসংশয়), বাউল, দাদরা
১১) মানুষের মন-প্রাণ সবসময় চায় আনন্দ নিয়ে থাকতে। সেই আনন্দই খোঁজে যা তাকে সুখ দেয়। রবীন্দ্রনাথ ব্যক্ত করেছেন, সুখ যদি প্রতিদিনের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে পরিবেষ্টিত থাকে, তবে আনন্দ প্রতিদিনের চাওয়া-পাওয়া’র অতীত। তবে আনন্দ পাই কোথায়? আমরা সাধারণ জীব, কি চাইতে কি চেয়ে ফেলি, তাই শাস্ত্রে “কাম”-কে অর্থাৎ কামনা-কে অন্যতম প্রধান শত্রু হিসেবে বলা হয়েছে। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণকথামৃতে শ্রীরামকৃষ্ণের মুখে কামিনীকাঞ্চন ত্যাগের কথা মাঝে মধ্যেই উল্লিখিত রয়েছে। কবির আকুল প্রার্থণাতেও সেই একই সুর যেন বাজছে – প্রভু যেন জগতের মায়াবন্ধন কেটে তাঁর চরণে স্থান দেন।
কাটো হে কাটো হে এ মায়াবন্ধন
রাখো রাখো চরণে এ মিনতি হে
পূজা পর্যায়ের এই গান, কবি রচনা করেছিলেন ১৮৮৫ সালে, মাত্র ২৪ বছর বয়সে।
সংশয়তিমিরমাঝে না হেরি গতি হে
১৮৮৫ (২৪), পূজা, রাজবিজয়, তেওড়া
১২) মনুষ্য জীবনে চলার পথে আমরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরিচয় নিয়ে এগিয়ে যাই। জন্মের সাথে সাথে পিতা-মাতা’র পরিচয় নিয়ে জন্মগ্রহণ করি, তারপর স্কুলে পড়ার সময়ে বিদ্যালয়ের পরিচয়ে, স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজের পরিচয়ে, তারপর কর্মক্ষেত্রের বা পেশার পরিচয়ে, তারপর স্বামী অথবা স্ত্রীর পরিচয়ে, তারপরও সন্তানাদির পরিচয়ে – এইভাবে বিভিন্ন পরিচয়ে আমরা পরিচয় হয়ে থাকি। এ ছাড়াও কিছু পরিচয় আছে যেগুলি আমরা সেভাবে হয়তো কোনো গুরুত্ত্ব দিইনি বা বুঝে উঠতে পারিনা, যেমন ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের পরিচয়, আত্মার সঙ্গে দেহের পরিচয়, ইত্যাদি। সময়-নদীর স্রোতে বয়ে চলার মাঝে, আমাদের জীবন-তরী বিভিন্ন ঘাটে বিভিন্ন পরিচয় নিয়ে এগিয়ে চলে। মনুষ্য জীবনে মানুষের অর্থাৎ কিনা “মান” (আত্মসম্মান)ও হুঁশের (সহমর্মিতা) পরিচয় নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই কাম্য। জীবন-নদী ঈশ্বর-সমুদ্রে মিলিত হওয়ার আগে, সকলের কণ্ঠেই যেন সেই আকুতি -
আমি তোমাদেরই লোক,
আর কিছু নয়,
এই হোক মোর শেষ পরিচয় ।।
পরিচয় (কবিতা)
--------------------------------------------------------------------------------------
প্রথম দিনের সূর্য
প্রশ্ন করেছিল
সত্তার নূতন আবির্ভাবে-
কে তুমি?
মেলেনি উত্তর।
বত্সর বত্সর চলে গেল
দিবসের শেষ সূর্য
শেষ প্রশ্ন উচ্চারিল
পশ্চিম সাগর তীরে
নিস্তব্ধ সন্ধ্যায়-
কে তুমি?
পেল না উত্তর।।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
(জোড়াসাঁকো, কলিকাতা
২৭ জুলাই, ১৯৪১, সকাল)
আজ যার সামনে এনেছ তোমাদের মালা,
তাকেই আমার পঁচিশে
বৈশাখের
শেষবেলাকার পরিচয় বলে
নিলেম স্বীকার করে,
আর রেখে গেলেম
তোমাদের জন্যে
আমার আশীর্বাদ।
----- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
("শেষ সপ্তক")
কৃতজ্ঞতা স্বীকার ---
১) কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও তাঁর রচিত “সঞ্চয়িতা” এবং “গীতবিতান”
-----------------------------------------------------------------------------------------